দুর্গাপুর উপজেলায় এক ইটভাটার দুই শ্রমিককে হাত পা বেধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। শুধুই নির্যাতনই নয় কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাদের দুটি ভ্যাানগাড়ী। ওই ইটভাটার লেবার সরদার এ নির্যাতন ও জিম্মি করে রেখে টাকা দাবি করারও অভিযোগ উঠছে।
সোমবার রাত এ উপজেলার দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের গগনবাড়ীয়া মেসার্স হক ব্রিকস নামের ইটভাটায় এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার নাজমুল হক নামের এক ব্যক্তি এ ইটভাটা পরিচালনা করেন। নির্যাতনের শিকার জসিম (২৫) ও মোস্তাক হোসেন (১৬)। তাদের বাড়ি চাপাইনবাগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার রসুনচক গ্রামে।
নির্যাতনের শিকার জসিম ও মোস্তাকের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ আগে ওই ইটভাটায় চাপাইনবাগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রাসেল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে কাঁচা ইট লোড দেওয়ার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে এখানে আসেন তাঁরা দুজন। কিন্তু ইটভাটায় কাজ শুরুর পর লেবার সরদার বুলেট কাজের হিসাব ও টাকা দিতে নানান তালবাহানা শুরু করেন। এতে তাঁরা দ্ইুজনই সিদ্ধান্ত নেয় এই ইটভাটা থেকে পালিয়ে যাবেন।
সোমবার রাত ৮টার দিকে তাঁরা ইটভাটা থেকে পালিয়ে যান। বিষয়টা টের পেয়ে ওই ভাটার লেবার সরদার বুলেট তাদের ধাওয়া করে ফলিয়ার বিল নামক স্থানে আটক করে সেখানেই মারধোর শুরু করে। পরে সেখান থেকে ধরে এনে ইটভাটার মালিকের সামনেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের পর ইটভাটার মধ্যেই দঁড়ি দিয়ে হাত বেঁধে ক্ষণে ক্ষণে নির্যাতন করে। এ সময় আমাদের দুইটা ভ্যানগাড়ী কেড়ে নিয়ে তালা মেরে দিয়েছে লেবার সরদার বুলেট। নির্য়াতনের পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে আমরা বাড়ি যেতে ভ্যানগাড়ী দুটি চাইলে তাঁরা টাকা দাবি করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মেসার্স হক ব্রিকস ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, কয়লার সঙ্গে তারা হরদম কাঠও পোড়াচ্ছেন। কৃষি জমি নষ্ট করে বিভিন্ন জায়গা থেকে ইটভাটায় মাটি আনা নেওয়া চলছে। প্রায় অর্ধশতাধিক লেবার কাজ করছেন। এদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬বছরের শিশুরাও রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটায় কর্মরত এক শ্রমিকদের জানান, ইটভাটায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক কাজ করতেন। লেবার সরদার ও তাদের লোকজন শ্রমিকদের জিম্মি করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কঠোর শ্রমে বাধ্য করতেন। অমানবিক শ্রম ও নির্যাতন সইতে না পেরে অনেকে পালিয়ে যান। জসিম ও মোস্তাককেও সহজ-সরল হওয়ায় তাকে ধরে নির্যাতন করা হয়।
মেসার্স হক ব্রিকস ইটভাটার গিয়েও লেবার সরদার বুলেটের সাক্ষাত পাওয়া যায় নি। পরে তাঁর ব্যবহৃত ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করে তিনি রিসিফ না করায় তার বক্তব্যে পাওয়া যায় নি।
উপজেলার গগনবাড়ীয়ার মেসার্স হক ব্রিকস ইটভাটার মালিক নাজমুল হক বলেন, আমি বর্তমানে অসুস্থ। একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাশমত আলী বলেন, বিষয়টা আমি জানি না। এখনও অভিযোগ পাই নি। তবে দ্রুত এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ওই দুই শ্রমিককে উদ্ধারের যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা বলেন, শ্রমিক নির্যাতন জঘন্যতম অপরাধ। এ বিষয়ে ওই দুই শ্রমিককে উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানা পুলিশকে নিদের্শ দেওয়া হবে।