মোঃ পাভেল ইসলাম, প্রধান প্রতিবেদন :
অচল হাতে লকডাউনেও পরিবার সচল রেখেছে সজীব, রেলগেট পুলিশ বক্সের পাশে আমাদের কালাই (মাসকলাই) রুটির দোকান ছিল। করোনায় এখন বন্ধ। তাই বাড়ি থেকে বের না হলে খাব কী?’রাজশাহী নগরীর শহীদ কামরুজ্জামান চত্বরে আবেগাপ্লুত হয়ে এভাবেই কান্নাভরা কণ্ঠে কিশোর সজীব (১৪) জানাল তার দুঃখের কথা।
জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী সজীব। বাম হাতটি অচল। এক হাত দিয়ে চায়ের ফ্ল্যাক্স ও ওয়ান টাইম কাপ প্যাকেটে পুরে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করে সে। করোনায় পুরো পরিবারের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে পড়ায় জীবন সংগ্রামে নেমেছে।
নগরীর রেলগেট পুলিশ বক্সের পাশে মা ও নানির একটি কলাই রুটির দোকান আছে। সজীব বলে, ‘জন্মের পর থেকেই দেখছি, মা ও আমার নানি সেখানেই কলাই রুটির ব্যবসা করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। সেখানে আমি তাদের সাহায্য করি। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে আমাদের দোকান বন্ধ হয়ে যায়।’
সজীবের ভাষ্য, ‘পেট চালাতে বুদ্ধি করে চায়ের ব্যবসা শুরু করেছি। ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না।’
লকডাউনে কীভাবে সারাদিন কাটে, জানতে চাইলে সজীব বলে, ‘সকালে মা বাড়িতে লাল চা তৈরি করে ফ্ল্যাক্সে ভরে দেন। নাস্তা করেই সেই চা নিয়ে বের হই সকাল ৮টার দিকে। সারাদিন চা বেচে দুপুর ২টার দিকে বাড়ি ফিরি। আধাঘণ্টা থেকে একঘণ্টা বাসায় খাওয়া ও গোসল সেরে আবারো বের হই ফ্ল্যাক্সভর্তি চা নিয়ে। রাত ১০ থেকে ১১টা পর্যন্ত চা বিক্রি করি। তারপর বাড়ি ফিরে সব টাকা মাকে দিয়ে দেই।’
সজীব জানায়, প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার চা বিক্রি হয়। কিন্তু করোনার কারণে পুলিশ লোকজনকে তাড়িয়ে রাস্তা ফাঁকা করলে সেদিন আর ব্যবসা হয় না। তাই মাঝে মধ্যে দু-একশ টাকা নিয়েও ফিরতে হয় বাড়ি।
নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট বনগ্রামের বাসিন্দা সজীব। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট সজীব। বাবা মিঠু (৬০) ও মা সুবেলা (৪৩)। বাবা কাজ করতেন একটি রেস্তোরাঁয় আর বড়ভাই রুবেল (২০) কাজ করতেন গার্মেন্টসে। অন্যদিকে মেজবোন মিতু (১৮) পড়াশোনা করেন কলেজে। করোনায় সবার উপার্জন বন্ধ হয়ে পড়ায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই চা বেচতে শুরু করে সজীব। চা বেচেই বর্তমানে সজীবের পরিবারের সদস্যদের আহারের ব্যবস্থা চলছে।
এক হাত অচল হওয়ায় ক্রেতাদের চা-ও ঠিকভাবে ঢেলে দিতে পারে না সজীব। ক্রেতাদের অনুরোধ করেন ফ্ল্যাক্সের মুখে চায়ের কাপ ধরার জন্য। একহাত দিয়েই কাপ বের করে কোনো রকম ফ্ল্যাক্সে চাপ দিয়ে চা বিক্রি করে ক্রেতাদের কাছে।
অভাবের তাড়নায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার পরই নিভে গেছে সজীবের শিক্ষার আলো। এখনো তার ইচ্ছে রয়েছে আর্থিক অবস্থা ভালো হলে কিংবা কারো কোনো সাহায্য সহযোগিতা পেলে আবারো বই হাতে নিতে চায় সে।
‘আমি পড়তে চাই। দিনে ব্যবসা করব, আর রাতে নাইটস্কুলে পড়ব। পড়াশোনা শিখে একটা সরকারি চাকরি করব’—যোগ করে সজীব।