ডেক্স নিউজ
দুয়ারে কড়া নাড়ছে বৈশাখ। গত কয়েক বছরে বাংলা নববর্ষ সর্বজনীন জাতীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে। সে সুবাদে এটি ব্যবসায়ীদেরও বাণিজ্যের বড় একটি উপলক্ষ হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখের বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই ঘরে-বাইরে বাংলা বর্ষবরণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ফেরিওয়ালার ঝুড়ি থেকে ফুটপাত, শপিং মল সব জায়গায় থাকে বৈশাখী বেচাকেনার ধুম।
করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত বছর সেই চিত্র ছিল না। এবারও ‘লকডাউনে’ পরিবহনসংকট, দোকানপাট সীমিত পরিসরে খোলা থাকা—সর্বোপরি করোনাভীতিতে ক্রেতাসংকটে সেই বৈশাখী বেচাকেনা এবারও হচ্ছে না। করোনা মহামারিতে গত বছর থেকেই ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়ে আছেন। পহেলা বৈশাখ আর ঈদুল ফিতরকে উপলক্ষ করে এবার তাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আরো ভয়াবহভাবে ফিরে আসায় তাঁদের সেই স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেবল বৈশাখী বাণিজ্যেই এবার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
kalerkanthoবাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকায় গত বছর বাণিজ্যের বড় মৌসুম পহেলা বৈশাখ ও দুই ঈদে কোনো ব্যবসাই করা যায়নি। করোনা রোধে ভ্যাকসিন চলে আসা এবং মাঝে প্রকোপ কমে যাওয়ায় এবার ব্যবসায়ীরা আশান্বিত হয়েছিলেন। তাই গতবারের লোকসান পুষিয়ে নিতে যাঁর যা পুঁজি ছিল তার পুরোটাই বিনিয়োগ করে তাঁরা বৈশাখী পণ্য তৈরি বা সংগ্রহ করেছেন। এরই মধ্যে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। বিনা নোটিশে ‘লকডাউন’ দেওয়া হয়েছে। সীমিত সময়ের জন্য দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এতে পণ্য বিক্রি করে পুঁজি ওঠানো সম্ভব হবে না। লাভ তো দূরের কথা, দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জেলায় জেলায় বৈশাখী পণ্য পরিবহন করা মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এতে সংগৃহীত পণ্যের বড় অংশই অবিক্রীত থেকে যাবে।
দুই ঈদের পরই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ করে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পোশাক। বিশেষভাবে ব্র্যান্ডের দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো প্রতিবছর বৈশাখ ঘিরে রমরমা বাণিজ্য করে।
দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর সংগঠন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি এবং সাদাকালো ফ্যাশন হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল হক আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বৈশাখে করোনায় লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় আমরা কোনো ব্যবসা করতে পারিনি। এবারও করোনা পরিস্থিতি ভালো নয়। মানুষ মার্কেটে কম আসবে। অথচ বাংলা নববর্ষই আমাদের ব্যবসায় টিকে থাকার বড় ভরসা।’
নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ওয়েবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাসরিন আউয়াল বলেন, ‘এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পণ্য পরিবহনের সুযোগ না থাকায় নারী উদ্যোক্তারা আশপাশের এলাকায় অল্প পরিসরে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হবে। এতে তাদের পক্ষে মূলধন ফিরে পাওয়াটাই কঠিন হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখে মিষ্টির ব্যাপক চাহিদা থাকে। নামিদামি মিষ্টির দোকানগুলোও পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখে। প্যারাডাইস, প্রিমিয়াম, আলী বাবা, মরণচাঁদ গ্র্যান্ড সন্স, জয়পুরহাট, রসসহ বিভিন্ন দোকান প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের দিন বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় ৮-১০ দিন আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও এবার লকডাউন বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় কোনো প্রস্তুতি নেয়নি। প্যারাডাইসের বিক্রেতা মীর নাসির বলেন, ‘লকডাউনে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পণ্য পরিবহনে বিধি-নিষেধ থাকায় মিষ্টি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। তাই আমরা নতুন করে বাড়তি ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না।’
সু্ত্র : কালের কণ্ঠ