আবুল কালাম আজাদ সিনিয়র রিপোর্টার
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে পেটের তাগিদে লকডাউন উপেক্ষা করে সড়ক ও অলি-গলিতে দেখা মিলছে অটোরিক্সাঅ চালক , অটোচালক, মিশুক চালক, সিএনজি চালক ও ভ্যানচালকদের।
লকডাউনের কারণে সাধারণ মানুষ বাসা থেকে কম বের হচ্ছেন। তাই যাত্রী সংকটের কারণে উপার্জন কমেছে এইসব ক্ষুদ্র পরিবহন চালক ও মালিকদের। অপরদিকে, ব্যবসা-বাণিজ্য কমায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন তারা
২১ এপ্রিল বুধবার রাজশাহী মহানগরী বিনোদপুর, কাজলা ,ভদ্রা মোড় ,তালাইমারি ,সাহেব বাজার, লক্ষীপুর, রেলগেট ,কাশিয়াডাঙ্গা ,কোট, শালবাগান, নওদাপাড়া ,আমচত্তর , আসাম কলোনি মালদা কলনি শিরোইল কলোনী শিরোইল, সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে রিক্সা, সিএনজি মিশুক ও ভ্যানচালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তারা বলছেন, লকডাউনের মধ্যে যে উপার্জন হচ্ছে, তাতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। লকডাউনের আগে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হতো। এখন সারা দিনে ১৫০-২০০ টাকাও আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এ টাকা দিয়ে বাসাভাড়া ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দুই বেলা খাবার জোটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে সংসার চালাতে সুদের বিনিময়ে ঋণ নিতে হচ্ছে। লকডাউনের মেয়াদ এভাবে বাড়লে না খেয়ে থাকতে হবে।
রাজশাহি রেলওয় স্টেশন থেকে কাশিয়াডাঙ্গা বাইপাস এলাকায় অটো রিক্সা চালান মো. মোজাম্মেল। বয়স প্রায় ৪০ বছর। তার দেশের বাড়ি মোহনপুর এলাকায়। গামে কাজ না থাকায়, স্ত্রীসহ দুই মেয়েকে নিয়ে ৪ মাস আগে রাজশাহী এসেছেন। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যেও পেটের দায়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে। তার পরও প্রতিদিন যে টাকা আয় করি তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। লকডাউনের আগে দৈনিক ৬০০-৭০০ টাকা রোজগার করতে পারতাম। লকডাউনের পর থেকে ২০০ টাকাও রোজগার করতে পারছি না। গত সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৮০ টাকা রোজগার করেছেন(ভাড়া মেরেছেন)। এখন যে টাকা রোজগার হচ্ছে তা দিয়ে বাসা ভাড়া দেওয়ার পর দু বেলা খাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব কারণে লকডাউনের মধ্যে ২ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে।’
শিরোইল কলোনী এলাকায় রিকশা চালান হালিম মিয়া। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে থাকেন আসাম কলোনি এক বস্তিতে। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে রাস্তায় মানুষ খুব বেশি বের হচ্ছে না। তাই আয়-রোজগার কম। আজকে খালি গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কারণে গাড়ি উল্টে রেখেছে পুলিশ। কখনো কখনো জরিমানা দিয়ে খালি হাতে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। তাই, সংসার চলাতে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন, তা রোজগার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছি।’
কাশিয়াডাঙ্গাএলাকার ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর মিয়া( ৫৫) বলেন, ‘লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ। কাজকর্ম না থাকায় রাস্তায় ভ্যান চালাতে পারছি না। গত দুই সপ্তাহ ধরে কোনো আয় রোজগার নেই। হাতে থাকা পুঁজি শেষ। ঋণ নিয়ে কোনোমতে চলছি।’
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সমাজসেবক মোহাম্মদ জামাত খান বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। এসব মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে লকডাউন হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, করোনার সঙ্গে সঙ্গে অভাবেও মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই দ্বিতীয় দফা লকডাউনের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে হলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের সাহায্য দরকার হবে। নয়তো আর লকডাউন মানুষ মানবে না।’