ইসলাম ডেক্স
মুসলমানদের কিবলা তখন বাইতুল মাকদাস। কাবাঘর তখন কিবলা হয়নি মুসলমানদের জন্য। সবাই বাইতুল মাকদাসের দিকে কিবলা করে নামাজ আদায় করেন। দয়ার নবী মুহাম্মদ (সা.)-ও। কিন্তু একজন, একজন ব্যক্তি বেঁকে বসলেন। না, সবাই বাইতুল মাকদাসকে কিবলা করলেও তিনি করবেন না। নামাজ আদায় করবেন না সেদিকে ফিরে। সাথিরা অবাক। তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করেন। বলেন, এসো। এদিকে ফিরেই নামাজ আদায় করি। সবাই তা-ই করেন। এমনকি রাসুলও! তুমি কেন করবে না?
তাঁর সেই একই জিদ। সিদ্ধান্তে অটল। না! সবাই ওই দিকে ফিরে নামাজ আদায় করলেও আমি তা করব না। আমি পারব না মক্কার কাবাকে পেছনে রেখে শামের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে।
কেন পারবে না? জবাব দেন না তিনি। মুখটা তাঁর গম্ভীর হয়ে যায়। ভারী হয়ে ওঠে চোখের দুটি কোনা।
সবাই তাকিয়ে থাকেন তাঁর দিকে। তাঁদের চোখে-মুখে অপার বিস্ময়।
কথাটি কানে গেল রাসুল (সা.)-এর, তিনি শুনলেন সব কিছু। তিনিও তখন নামাজ আদায় করলেন বাইতুল মাকদাসকে কিবলা করে। সেটাই তো তখনকার নিয়ম। নবীজি শুনলেন সব।
শুনলেন, মুসলমানদের মধ্যে একজন, মাত্র ওই একজনই বাইতুল মাকদাসকে কিবলা না করে মক্কার কাবাকেই কিবলা বানিয়ে নামাজ আদায় করছেন। তাঁর নাম আল বারা ইবনে মারুর।
রাসুল (সা.) বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে নির্দেশ দিলেন, না। কাবা নয়। আপাতত আমাদের কিবলা বাইতুল মাকদাস। সেই দিকে ফিরেই নামাজ আদায় করতে হবে। এটাই নিয়ম। এটাই নির্দেশ। রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ বলে কথা! অমান্য করার সাধ্য আছে কার? অগত্যা মুখ ফেরালেন। মুখ ফেরালেন বাইতুল মাকদাসের দিকে। কিন্তু মৃত্যুর সময়ে তিনিই আবার, সেই আল বারা ইবনে মারুর তাঁর পরিবারের লোকদের বললেন, তোমরা আমার মুখটি ঘুরিয়ে দাও কাবার দিকে। আমি কাবামুখী হতে চাই। তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
বারা ইবনে মারুর (রা.) ছিলেন আকাবার শেষ বাইয়াতের একজন সদস্য। বাইয়াত গ্রহণের পর তিনি তাঁর কাফেলাসহ ফিরে গেলেন মদিনায়। মদিনায় ফিরে যাওয়ার কয়েক মাস পরেই তিনি ইন্তেকাল করেন। হিজরত করে মদিনায় এলেন দয়ার নবী। মদিনায় পৌঁছেই তিনি সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে চলে যান বারার কবরে। রাসুল (সা.) তাঁর জানাজার নামাজ আদায় করেন। এরপর সাহাবিদের নিয়ে তিনি বারার জন্য দোয়া করেন : হে আল্লাহ! আপনি আল বারা ইবনে মারুরের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।
কিয়ামতের দিন তাঁর ও আপনার মাঝে আড়াল না রাখুন এবং তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।
বারা (রা.)-এর মৃত্যুর বেশ পরের কথা। রাসুল (সা.) মদিনায় আছেন। আছেন মদিনার সেই গোত্রপতি, সেই প্রথম কাবামুখী নামাজ আদায়কারী আল বারা ইবনে মারুর (রা.)-এর বাড়িতে। আল বারার স্ত্রী দয়ার নবীজি এবং তাঁর সাথিদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন। রাসুল (সা.) দুপুরের সেই খাবার খেয়ে আল বারার বাড়িতেই জোহরের নামাজ আদায় করার জন্য দাঁড়ালেন। সঙ্গে আছেন তাঁর সাথিরা। তাঁরা দাঁড়িয়েছেন সেই বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে। দুই রাকাত নামাজ শেষ হতেই দয়ার নবী পেয়ে গেলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ। নির্দেশ এলো কাবামুখী হয়ে নামাজ আদায় করার জন্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুড়ে দাঁড়ালেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। ঘুরে দাঁড়ালেন বাইতুল মাকদাস থেকে কাবার দিকে। তখন থেকে কাবাই হয়ে গেল একমাত্র কিবলা। কী সৌভাগ্যবান আল বারা ইবনে মারুর (রা.)-এর!
তাঁর সেই সৌভাগ্যের কি কোনো তুলনা চলে? তিনিই তো প্রথম, যিনি কাবাকে প্রথম কিবলা বানিয়েছিলেন। আর মহান রাব্বুল আলামিন সেই কাবাকেই চিরকালের জন্য কিবলা হিসেবে কবুল করলেন। কবুল করেন তাঁর অপার করুণায়। আল্লাহ পাক যাঁকে কবুল করেন, এভাবেই করেন। এভাবেই করেন তাঁকে সম্মানিত।
সূত্র : সাহসী মানুষের গল্প