(নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : নেত্রকোণা জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বৃহৎ ৩৩৪ কিলমিটার নদী ছোট- বড় খালে পরিণত হয়েছে । ৫১২৫.৬ কিলোমিটারের ১১৫টি নদীও খালে পরিণত হয়েছে । এগুলো বর্তমানে খাল হিসেবে গণণা করছে পনি উন্নয়ন বোর্ড। দীর্ঘদিন যাবৎ সেসব নদ-নদীগুলো খনন না করায় কালের আর্বতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানির সাথে আসা বালি ও পলি পড়ে বেশীরভাগ নদ-নদীর নাব্যতা হারিয়ে গেছে। নদীর গতিপথ লোপ পেয়ে খালে পরিণত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র। দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে আজ। একসময় এইসব পরিনত খালে পাওয়া যেত ইলিশ, চিংড়ি, বোয়াল সহ নানা জাতের মাছ। নদী পথে চলত নেত্রকোণার ব্যাবসা বাণিজ্য। ট্রলার বা নৌকায় চড়ে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ব্যবস্যার উদ্দেশ্যে ছোট বড় বয়বসায়ীরা আসতো নেত্রকোণা সদরে। সেচের প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে এই নদীসমূহের পানি। নেত্রকোণা জেলায় ১২২টি নদ-নদীর মধ্যে বড় ৭টি নদী হলো-সোমেশ্বরী, ভোগাই কংশ, ধনু নদী, পিয়াইন, মগড়া, গুমাই, উপধাখালী ও ছোট নদীসমূহ পাইকুড়া, সহ অনেক ছোট নদী যেগুলো বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে সেগুলো হলো- পূর্বধলা উপজেলায় ১১টি খাল আছে যা আগে নদী ছিলো, ১। কালিহর খাল, ২। বালিয়া খাল, ৩। লাউয়ারী খাল, ৪। ফলাখালী খাল, ৫। খসখসিয়া খাল,৬। বারাবারির খাল, ৭। ধলাই খাল, ৮। মরা খাল, ৯। পাছুয়া খাল, ১০। বলজানা খাল, ১১। সুয়াই খাল। দূর্গাপুর উপজেলায়-৯টি খাল রয়েছে , যা একসময় ছোট নদী ছিলোঃ এগুলো হলোঃ যথা- ১। নালিয়া আগা খাল, ২। ছুখাই খালী খাল, ৩। বালচ নদী খাল, ৪। ঝিনাইগাতি খাল,৫। আরবাখালী খাল, ৬। নাহিতখালী খাল, ৭। সত্তর মুন্সি খাল, ৮। বানেস্বরী খাল , ৯। পাগরিয়া খাল। মোহনগঞ্জ উপজেলায় ৭টি খাল রয়েছে এগুলো হল: ১। ঘোড়াউত্রা খাল, ২। মরা ধলাই নদী, ৩। বেলদরিয়া খাল, ৪। দাইরের খাল, ৫। কলুংকা খাল, ৬। পাপমারা খাল, ৭। নৌকা ভাঙা খাল। খালিয়াজুরীতে ৭টি- ১৷ বিশ্বহরি ও ডুলিয়াজান খাল,২। ডুলনিরখাল খাল, ৩। সেলা নদী, ৪। পুটিয়া খাল, ৫। নাইয়রী খাল, ৬। বয়রা খাল, ৭। বৌলাই খাল। মদনে ৫টি ছোট নদী বর্তমান খাল: ১। ধালাই নদী ২। বয়রারা নদী, ৩। নাসিরখালী খাল, ৪। পাতুনিয়া খাল, ৫। আন্দারমানিক খাল। কলমাকান্দায় ১৪টি-১। জাঙ্গার খাল, ২। গুতুরা খাল, ৩। সিদ্ধখলা খাল, ৪। আরিন্দাখালী খাল, ৫। গোবিন্দপুর খাল, ৬। বড়ইন্দু খাল, ৭। গোলামখালী খাল, ৮। মান্দাউড়া খাল, ৯। মহাদেও নদী, ১০। শ্যামপুর খাল, ১১। গুমাই নদী, ১২।দিলুরা খাল, ১৩। বোগাই খাল। ১৪। বাইন বিল খাল আটপাড়ায় ২টি- পাগলাখালী খাল, বারহাট্টা উপজেলায় ২৬টি- মরা কংশ নদী, মরা বিশনাই খাল, মরা বিশনাই নদী, বড় ধলা বিল, ঘালিয়ামারি খাল, নানিয়া চাটগাও খাল, নয়া বিল খান, দত্তখিলা খাল, ঘাবারকান্দা, বারই খাল, আমতলা খাল, চাপারকোনা খাল, ধলেশ্বরী খাল, বাগাইর খাল, মহেশখালী খাল, ধলা খাল, গোলামখালী খাল, রৌহা খাল, নন্দী বাড়ী খাল, বড়াপাড়া খাল, টংগা খাল, কান্দাপাড় খাল, বড়িখাল খাল, কামালপুর খাল, শিবাড়ী খাল, বালিজুড়ি খাল। নেত্রকোণা সদরে ১৮টি- যথা হরিখালি খাল, নাপিতখালি খাল, ডুপিংখালী, মগড়া খাল, খোশাই খাল, ঝিটাই খাল, রেজখালী খাল, নগুয়া খাল, ঠাকুরকোণা এমডি-৩ খাল, চুচিয়া খাল, ধলাই খাল, দরিজাগি খাল, সিদলী খাল, জাহাঙ্গীরপুর খাল, বালচ নদী, মরাখালী খাল, তিলকখালী খাল। কেন্দুয়ায় আছে ১৬টি খাল- যথা- রাজি খাল, সাইডুলি নদী, পাটেশ^রী খাল, হুচিয়া খাল, তুরুকপাড়া খাল, ডুমরি খাল, রাজপত খাল, ওয়াই খাল, চরপুর খাল, সান্দিকোণা খাল, কলতরিল খাল, কুরদিঘা খাল, সুতি খাল, কচন্দরা খাল, বালকি খাল, সামুকজানি খাল। বিভিন্ন এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী মহল নদী ও খালের বিভিন্ন অংশ যে যার মতো দখলে নিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরে ধান চাষ করেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে নীরব থাকায় সচেতন মহলের ধারণা, জনগণ একদিকে নদীর উপকারীতা থেকে বি ত হচ্ছে অপরদিকে সরকার বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হারাচ্ছে । নদীর দুই পাড়ের কৃষকরা জানান, তারা এই নদীর পানি দিয়ে সারা বছর ঘর গৃহস্থালীর কাজ করতো। বোরো ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার কোনো চিন্তা করতে হতো না। এখন আর জমিতে সেচ দেয়ার মতো পানি নেই। তারা আরো জানান, এলাকার জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকায় মাছ ধরা থেকে বিরত হয়েছে জেলেসহ সাধারণ জনগণ। দুই তীরে যাদের জমি আছে তারাই নদী দখলে নিচ্ছে। যাদের জমি নেই তারাও ধান লাগানোর ছলনায় নদী দখল করছে। কেউ কেউ সুবিধা অনুযায়ী নদী থেকে বালি উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় অবৈধভাবে ইটের ভাটা বসিয়ে রমরমা ব্যাবসা করছে। এ ব্যাপারে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ তিনি বলেন, নদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। যে সব নদ-নদী খননের প্রয়োজন তার একটি তালিকা তৈরী করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।।। ফয়সাল চৌধুরী নেত্রকোণা